ছত্রাকের আক্রমণ প্রতিরোধ ও প্রতিকারে ছত্রাকনাশক ( fungicide) ব্যবহার করা হয়। ছত্রাক মাইসেলিয়াম, স্পোরের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। বেশিরভাগ এদের খালি চোখে দেখা যায় না। ছত্রাক মাটির নিচে, বীজের গায়ে,গাছের কান্ড, পাতায় থাকতে পারে, বাতাসেও ভেসে বেড়ায়।
প্রকারভেদ - এক এক ছত্রাকনাশক এক এক রকম, কার্যকরেও ভিন্ন। এজন্য প্রকারভেদ জানা জরুরি।
গাছকে কিভাবে রক্ষা করবে -এর উপর ভিত্তি করে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
১. প্রতিরোধী( Protective ) - এ ধরনের ছত্রাকনাশক গাছে ছত্রাকের আক্রমণে বাধা দিবে। যেমন-সালফার জাতীয় ছত্রাকনাশক।
2. (curative)- ছত্রাকের মাইসেলিয়ামকে ধ্বংস করে এবং ছত্রাকের বংশবিস্তারে বাধা দেয়।
3.(Eradicant) প্রাথমিক লক্ষণ প্রকাশের পর এ ধরনের ছত্রাকনাশক স্পোর ও মাইসেলিয়ামকে ধ্বংস করে। যেমন-প্রবাহমান ছত্রাকনাশক।
ফাঙ্গিসাইড হয় দু’ধরনের- জৈব এবং কেমিক্যাল। এই কেমিক্যালগুলির আবার বেশ কয়েকটি গ্রুপ আছে। চলুন এক এক করে জেনে নেওয়া যাক –
গাছে কিভাবে ছড়িয়ে পড়ে- এর উপর ভিত্তি করে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
১. সংস্পর্শী(contact) ছত্রাকনাশক- এরা সরাসরি ছত্রাকের উপর আক্রমণ করে এবং গাছের পাতা ও টবের মাটিতে বসবাসকারী ছত্রাক ধ্বংস করে। এ জাতীয় ছত্রাকনাশক প্রয়োগ করার পর গাছের ভেতরে, পাতায় এক পৃষ্ঠ থেকে অপর পৃষ্ঠে প্রবেশ করতে পারে না। কান্ড, পাতার উপরে লেগে থাকে। ছত্রাক এর সংস্পর্শে আসলে বিষক্রিয়া ঘটায়। যেসব ছত্রাক বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়, গাছের উপরের পৃষ্ঠে আক্রমণ করে প্রধানত তাদের ধ্বংস করে। যেমন- ম্যানকোজেব, কপার, প্রপিনেব, ম্যানেব জাতীয় ছত্রাকনাশক
২.প্রবাহমান(Systemic)- এরা সরাসরি নয়, কাজ করে ঘুরপথে। ধরনের ছত্রাকনাশক গাছে প্রয়োগের পর গাছের পাতা এবং শিকড়ের সাহায্যে শোষিত হয়ে, বিভিন্ন শিরা উপশিরার মাধ্যমে সম্পূর্ণ গাছে ছড়িয়ে পড়ে, ভিতর থেকে কাজ করে। যেসকল ছত্রাক গাছের ভেতরে আক্রমণ করে প্রধানত তাদের ধ্বংস করে। যেমন - কার্বেন্ডাজিম।
৩.সংস্পর্শী+ প্রবাহমান( contact + systemic)- এরা উপরের দুই ধরনের কাজ পারে। অর্থাৎ সিস্টেমিক এবং কন্টাক্ট ফাঙ্গিসাইডের মিশ্রণে তৈরি। এরা দু’ধরণের কাজই করে থাকে। কার্বেন্ডাজিম + ম্যানকোজেব, ম্যানকোজেব + মেটাক্সিল।
কোন ছত্রাকনাশক কখন প্রয়োগ করতে হয়:
★ কন্ট্যাক ছত্রাকনাশক:
এই ছত্রাকনাশক এর কাজ হচ্ছে প্রতিরোধ করা। যাতে কোন রোগ বালাই না হতে পারে।এই ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে গাছের ডাল ও পাতাতে হালকা প্রলেপ পড়ে, এতে করে যখন রোগ জীবানু এর সংস্পর্শে আসে তখনই মারা যায়। তাই কোন রোগ জীবানু গাছের ভিতর প্রবেশ করতে পারেনা। তাই এই ছত্রাকনাশক প্রতি ৭ দিন অন্তর অন্তর ব্যাবহার করা যেতে পারে গাছের সুরক্ষার জন্য।রোগের আগাম ব্যাবস্থার জন্য এটা ব্যাবহার করতে হবে এবং রোগের প্রাথমিক অবস্থায়।যদি রোগ হয়েই যায় তাহলে আর এই মেডিসিন ব্যাবহার করে লাভ নেই।
এই কম্পোজিশন এ পড়েছে ম্যানকোজেব গ্রুপ ও কপার গ্রুপ:
* ম্যানকোজেব গ্রুপ_ যেমন - ডায়াথেন এম৪৫
* কপার গ্রুপ -যেমন - কপার,ব্লিটক্স
তবে সাধারণভাবে বলা যায় এই ২ টা গ্রুপ থেকে সব সময় ব্যাবহারের জন্য ম্যানকোজেব গ্রুপ ব্যাবহার ভালো হবে। আপনারা খেয়াল করলে দেখবেন বিভিন্ন কোম্পানি গুলি ম্যানকোজেব এর সাথে অন্য গ্রুপ এর কম্বাইন্ড মেডিসিন গুলি একসাথে এড করে বাজারে ছেড়েছ।
ম্যানকোজেব গ্রুপের ও কপার গ্রুপের মেডিসিন স্প্রে করার ৭ দিন পর ইচ্ছা করলে শাকসব্জি ও ফলমূল খেতে পারবেন।
★ সিসটেমিক ছত্রাকনাশকঃ
যখন রোগ আপনার গাছে আক্রমন করেই ফেলসে এবং রোগে প্রাথমিক থেকে আরেকটু খারাপ অবস্থার দিকে যাচ্ছে তখন আপনাকে এই সিসটেমিক ছত্রাকনাশক ব্যাবহার করতে হবে রোগ সারানোর জন্য।
সিসটেমিক মেডিসিন কম্পোজিশন পড়েছে কার্বোন্ডাজিম গ্রুপে। এই গ্রুপের মেডিসিন গ্রুলি হলো -অটোস্টিন, নোইন, এমকোজিন ইত্যাদি।
এই গুপের মেডিসিন ব্যাবহারের ১৫ দিন পর শাকসব্জি খেতে পারবেন।
রোগের পরিমান যদি অধিক হয় যখন কার্বোন্ডাজিম এর গ্রুপের মেডিসিন দিয়েও কাজ হচ্ছেনা তখন আপনাদেরকে আরেকটু হায়ার লেভেল এর মেডিসিন গুলি স্প্রে করতে হবে। এ গ্রুপ গুলির মধ্যে -
* হেক্সাকোনাজল -কনটাফ,শাবাব ইত্যাদি
* প্রোপিকোনাজল -টিল্ট,সাদিদ ইত্যাদি
* টেবুকোনাজল -নাটিভো,ব্যাবিজল ইত্যাদি
এই ৩ টি গ্রুপ খুবই শক্তিশালী মেডিসিন। যখন গাছ একেবারেই ভয়াবহ অবস্থা হয়ে যাবে সাধারণ সিসটেমিক মেডিসিন এ কাজ হবে না তখন ব্যাবহার করতে হবে। স্প্রে করার ১৫-২০ দিন পর শাকসব্জি ফলমুল খেতে পারবেন।
★ মিশ্র ছত্রাকনাশক:
অনেক মিশ্র কম্পাইজেশন আছে আমি ২ টি নিয়ে আলোচনা করছি
১।ম্যানকোজেব +কার্বোন্ডাজিম- যেমন -ম্যানসার
২।ম্যানকোজেব + মেটালেক্সিল-যেমন-রিডোমিল গোল্ড।
এই দুইটা সিসটেমিক ও কন্ট্যাক গ্রুপ এর কম্বাইন্ড দিয়ে তৈরি করেছে। তাই রোগের প্রাথমিক অবস্থায় এই মিশ্র ছত্রাকনাশক দেয়া যাবে। একেবারে রোগ খারাপ এর দিকে গেলে তখন আর এটাও কাজে দিবে না। এই কম্পোজিশন এ যেহেতু কার্বোন্ডাজিম আছে তাই আপনি রুটিন করে ৭ দিন পরপর স্প্রে করতে পারবেন না। যদি রোগ হয় সেই ক্ষেত্রে ৭ বা ১০ দিন পরপর স্প্রে করে রোগ ভালো হলে এটা স্প্রে বন্ধ করে দিতে হবে।
# বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে কিন্তু আপনাকে ছত্রাকনাশক দেয়া প্রয়োজন সেই ক্ষেত্রে নিচের দুইটি গ্রুপ ব্যাবহার করতে পারেন।
১।সাইমোক্সানিল+ ম্যানকোজেব -যেমন -মাইক্রা
এটি ৩ ঘন্টার ভিতর মিশে যায় এরপর বৃষ্টি হলেও আর সমস্যা নেই।
২।পাইরাক্লোস্ট্রেবিল+মেটিরাম-যেমন-ক্যাবরিওটপ
একটু দাম বেশি।এটি ১ ঘন্টার আগেই মিশে যায় এরপর বৃষ্টি হলেও সমস্যা নেই।
পরিশেষে বলা যায় প্রাথমিক অবস্থায় নরমাল ছত্রাকনাশক গুলি ব্যাবহার করুন। প্রাথমিক গুলিতে কাজ না হলে ধীরে ধীরে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ছত্রাকনাশক গুলি ব্যাবহার করুন।
কৃষিবিদ শাফিক আহমাদ, ব্র্যাক