জেলা প্রতিনিধি, নাটোর:
নাটোর সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নীলিমা জাহান জানান, বিএসআরআই-৪৬ একটি পরিশোধিত ভিত্তি বীজ। প্রত্যায়িত ভিত্তি বীজ কৃষকদের মাঝে সরবরাহের মাধ্যমে আখ চাষ বৃদ্ধি করা গেলে কৃষকেরা লাভবান হবেন। চিনি শিল্প এগিয়ে যাবে।
বিএসআরআই’র প্রকল্প পরিচালক ড. মো. ইমাম হোসেন জানান, প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে রোগমুক্ত ভিত্তি বীজের প্রত্যায়িত প্লট তৈরি ও ফলন বৃদ্ধি করা। এর ফলাফল খুব ভালো। এ ধরনের প্লটে রোগের প্রকোপ অনেক কম। ভালো বীজ বেশি উৎপাদনের মাধ্যমে চিনির ঘাটতি পূরণ করাই এ প্রকল্পের মূল লক্ষ্য।’
নাটোর চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ ফরিদ হোসেন ভূঁইয়া জানান, বিএসআরআই-৪৬ জাতের আখ অধিক উৎপাদনশীল, অধিক চিনি ধারণক্ষমতা সম্পন্ন ও অধিক রিকভারি সম্পন্ন। এ প্রকল্পের মাধ্যমে অবশ্যই চিনি শিল্প লাভবান হয়েছে। প্রকল্পটি আরও ১ বছর চালু থাকলে জেলার দুটি মিল জোন এলাকায় রিপ্লেসমেন্ট দিয়ে অধিক পরিমাণ আখ উৎপাদন ও চিনির রিকভারি সম্ভব হবে।
বিএসআরআই’র মহাপরিচালক ড. কবির উদ্দিন আহমেদ জানান, প্রকল্পটি এ বছরই শেষ হয়ে যাবে। সরকার চিনি শিল্পের দিকে নজর দিচ্ছে। বন্ধ থাকা চিনিকলগুলো চালুর উদ্যোগ নিয়েছে। সে ক্ষেত্রে প্রচুর আখের প্রয়োজন হবে। এ জন্য আখের উৎপাদন বাড়াতে হবে। বিএসআরআই-৪৬ জাতের আখ চাষ করে কৃষকেরা আর্থিকভাবে দ্বিগুণ লাভবান হবেন। পাশাপাশি চিনির ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে ।
নাটোরে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএসআরআই) উদ্ভাবিত ৪৬ জাতের আখ চাষ করে বদলে যাচ্ছে কৃষকের ভাগ্য।
রোগবালাইমুক্ত বীজের মাধ্যমে কৃষকেরা অন্য জাতের আখের চেয়ে বেশি ফলন পাচ্ছেন। প্রতি বিঘায় ৪৫০ মণ থেকে ৬০০ মণ পর্যন্ত আখ উৎপাদন হচ্ছে। ফলে কৃষকেরা ৪৬ জাতের আখ উৎপাদনে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। পরীক্ষামূলকভাবে নাটোর চিনিকল এলাকায ১০৫টি প্লটে কৃষকেরা ৪৬ জাতের আখ চাষাবাদ করেছেন। প্রত্যেক চাষি বিঘাপ্রতি ৪৫০-৬০০ মণ পর্যন্ত আখের ফলন পাচ্ছেন। যা অন্য জাতের আখের চেয়ে বিঘাপ্রতি ২১০-৩৫০ মণ পর্যন্ত বেশি। বর্তমানে ৪৬ জাতের আখ চাষ সম্প্রসারণের জন্য বিএসআইআর বীজ সার ও প্রযুক্তিগত সহযোগিতা দিচ্ছে।
বিএসআরআই সংশ্লিষ্টরা জানান, কৃষকদের জীবনমান, দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন এবং চিনির ঘাটতি দূর করতে প্রতিষ্ঠানটি ২০২১-২২ অর্থবছরে ‘কৃষক পর্যায়ে আখের রোগমুক্ত পরিচ্ছন্ন বীজ ও বিস্তার’ শীর্ষক প্রকল্পের যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৭টি সুগার মিল জোন ও নন মিল জোনে প্রকল্পের কাজ চলমান। এ ছাড়া দেশের ৩১টি জেলার ৭০টি উপজেলায় এ প্রকল্পের কাজ চলমান।
প্রতিষ্ঠানের দেওয়া তথ্যমতে, দেশে একমাত্র বিএসআরআই আখের বীজ উৎপাদন ও মানোন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি দেশের অর্থনীতি ও চিনি শিল্পের উন্নয়নই এ প্রকল্পের একমাত্র উদ্দেশ্য। তবে দেশে আর কোনো প্রতিষ্ঠান আখ নিয়ে কাজ না করায় উৎপাদন নিয়ে নেতিবাচক চিন্তা করেন। কৃষকদের এ নেতিবাচক মনোভাব দূর করতে বিএসআরআই কৃষকদের বিনা মূল্যে বিএসআরআই-৪৬ জাতের সত্যায়িত ভিত্তি বীজ সরবরাহ করছে। কৃষকেরা সত্যায়িত বীজ চাষ করে দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন।
’