নিজস্ব প্রতিবেদক শ্যামনগর ( সাতক্ষীরা) : সুন্দরবন বেষ্টিত উপকূলীয় এলাকা শ্যামনগর উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নে ভুট্টা ও সূর্যমুখী চাষে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছেন কয়েকজন কৃষক। ব্র্যাক জলবায়ু পরিবর্তন কর্মসূচির কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের সিংহরতলী, হেতালখালি ও উত্তর কদমতলী গ্রামে এ দুটি ফসলের ভালো ফলন হয়েছে। এ সফলতায় চাষিদের আনন্দ দেখে অন্যরাও চাষাবাদে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
জানা গেছে, উপজেলার উপকূলীয় এলাকার মাটি ও পানিতে লবণের উপস্থিতি আছে। সাধারণত মার্চ মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার পরিমাণ বাড়তে থাকে। এ সময় লবণাক্ততার পরিমাণ ১০ ডিএস/মিটার বা এর চেয়ে বেশি থাকে। ফলে এই পানিতে ফসল উৎপাদন হয় না বললেই চলে।
এই লবণাক্ত এলাকায় ভুট্টা ও সূর্যমুখী চাষে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছেন কৃষকেরা। তারা লবণ সহিষ্ণু ভুট্টা যুবরাজ ও সূর্যমুখী হাইসন-৩৩ চাষ করে চমক দেখিয়েছে। এ বীজের ভুট্টা ও সূর্যমুখী লবণ সহ্য করতে পারে।
ভুট্টা বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয়েছে ১৫ থেকে ২০ মণ। প্রতি মণ বিক্রি হচ্ছে দেড় থেকে দুই হাজার টাকায়। সে হিসাবে বিঘাপ্রতি বিক্রি হবে ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা। অথচ বিঘাপ্রতি খরচ মাত্র ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। সূর্যমুখী বিঘাপ্রতি উৎপাদন হয় ৫ থেকে ৬ মণ। প্রতি বিঘায় বিক্রি হয় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকায়। খরচ মাত্র ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। কৃষক অল্প খরচে বেশি লাভবান হওয়ার জন্য ভুট্টা ও সূর্যমুখী আবাদ করে যাচ্ছেন।
শ্যামনগর উপজেলায় মার্চ, এপ্রিল, মে ও জুন মাসজুড়ে চলে ভুট্টা ও সূর্যমুখীর চাষাবাদ। এই সময় বেশির ভাগ জমি পতিত থাকে। কিন্তু লবণ সহনশীল ফসল বিশেষ করে ভুট্টা ও সূর্যমুখী চাষ করতে পারলেই এই সব জমিতে ভালো ফলন সম্ভব বলে মনে করেন কৃষিবিদেরা।
হেতালখালী গ্রামের কৃষক সুকুমার বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্র্যাক এডাপটেশন ক্লিনিকের কৃষি কর্মকর্তা মোঃ শাফিক আহমেদের পরামর্শে এবার ভুট্টার চাষ করেছি। অল্পদিনে ভালো লাভ পেয়েছি। ভুট্টা চাষের খরচ কম, লাভ বেশি। পানি কম লাগে, ফসল ভালো হয়। তিনি আরও বলেন, আশা করি আগামীতে বেশি করে জমিতে চাষাবাদ করব।
কৃষক সুকুমার বলেন, সূর্যমুখী ও ভুট্টার জমিতে কম্পোস্ট সার ব্যবহার করার ফলে ফলন ভালো হয়েছে। কম্পোস্ট সার ব্যবহার করলে জমিতে সার ও সেচ কম লাগে। উপজেলার মুন্সিগঞ্জ ইউনিয়নের হেতালখালী গ্রামের কৃষক নিমাই মন্ডল ও আব্দুর রহমান বলেন, ভুট্টা ও সূর্যমুখী চাষাবাদ করে ব্যাপক লাভবান হয়েছি।
ব্র্যাক জেও ক্রুজনেট প্রকল্পের এরিয়া ম্যানেজার কে এম আলি হাসান বলেন জমিতে ভার্মি কম্পোস্ট সার ও মালচিং ব্যবহার এবং লবণ সহনশীল ফসল ব্রিধান ৩০, ব্রী ধান-৭৫, তরমুজ ব্লাক শাইন, ভুট্টা ও সূর্যমুখীর আবাদ করা হয়েছে। যা চাষ করে কৃষকেরা লাভবান হচ্ছেন। শ্যামনগর মুন্সিগঞ্জে কৃষকেরা লবণাক্ততা সহনশীল জাতের ধানের পাশাপাশি ভুট্টা ও সূর্যমুখী চাষ করে বেশ লাভবান হচ্ছেন। আগামীতে ব্যাপকভাবে এই ফসল চাষাবাদের আওতায় আনার জন্য আমরা কাজ করে যাচ্ছি।