কৃষি প্রতিবেদকঃ ফুলকপি ব্রাসিকেসি পরিবারভুক্ত ব্রাসিকা অলেরাসিয়া (Brassica oleracea) প্রজাতির সবজিগুলোর একটি। এটি একটি বার্ষিক ফসল যা বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। ফুলকপিতে যথেষ্ট পরিমাণে সালফার, পটাশিয়াম , ফসফরাস ও খনিজ উপাদান রয়েছে। আসুন জেনে নিন ফুলকপি চাষ ও পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা।
ভাদ্র-আশ্বিন (মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য অক্টোবর) মাসে বীজ বপন করতে হয় এবং কার্তিক থেকে অগ্রহায়ন পর্যন্ত (মধ্য নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর) জমিতে চারা রোপণ করা যায়।
মাটি: পানি জমেনা এমন উর্বর দোঁয়াশ ও এঁটেল মাটি।
ফুলকপির বিভিন্ন জাত:
১. আগাম জাত অগ্রাহনী, সুপার স্নোবল, ট্রপিক্যাল স্নো-৫৫, সামার ডায়মন্ড এফ ১, স্নো কুইন এফ ১, হিট মাস্টার ও হাইব্রিড জাত। এসব জাতের বীজ শ্রাবণ ও ভাদ্র মাসে বুনতে হয়।
২. মধ্যম আগাম জাত পৌষালী, রাক্ষুসী, হোয়াইট টপ, স্নো ওয়েভ, বিগটপ, বিগশট, মোনালিসা এফ ১, চন্ড্রিমা ৬০ এফ ইত্যাদি। ভাদ্র ও আশ্বিন মাস হলো এসব জাতের বীজ বোনার উপযুক্ত সময়।
৩. নাবী জাত ইউনিক স্নোবল, হোয়াইট মাউন্টেন, ক্রিস্টমাস ও হাইব্রিড জাত। এসব জাতের বীজ বোনার উপযুক্ত সময় হলো আশ্বিন-কার্তিক মাস।
এ জাতগুলো ছাড়াও বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক বারি ফুলকপি-১ (রোপা) ও বারি ফুলকপি-২ (অগ্রদূত) নামে মধ্যম আগাম জাতের ফুলকপির উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়। বারি ফুলকপি-১ জাতের প্রতিটি ফুলকপির ওজন ৮৫০ থেকে ১০০০ গ্রাম হয়। এ জাতের ফুলকপি চারদিকে পাতা দিয়ে ঢাকা থাকে।
বীজের হার: এক শতক জমিতে রোপণের জন্য ২ থেকে
ভাল বীজ নির্বাচন : প্রতি হেক্টর জমিতে ফুলকপি চাষের জন্য ৩০০-৩৫০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন। ভালোভাবে জমি তৈরি করার পর ১০-১৫ সে.মি. উঁচু পাশাপাশি ২ টি বেডের মাঝখানে ৩০ সে.মি. চওড়া ও ২৫ সেমি গভীর নালা রাখুন।
বীজতলা প্রস্তুতকরণ : ফুলকপির চারা বীজতলায় উৎপাদন করুন। ১×৩ মিটার বীজতলায় সমপরিমাণ বালি, মাটি ও জৈবসার মিশিয়ে ঝুরাঝুরা করে তৈরি করুন। দ্বিতীয় বীজতলায় চারা রোপণের ৭/৮ দিন আগে প্রতি বীজতলায় ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ১৫০ গ্রাম টিএসপি/ ডিএপি ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার ভালভাবে মিশিয়ে দিন। চারা ঠিকমত না বাড়লে পরে প্রতি বীজতলায় প্রায় ১০০ গ্রাম পরিমাণ ইউরিয়া সার ছিটিয়ে দিন। বীজ গজানোর ১০-১২ দিন পর গজানো চারা দ্বিতীয় বীজতলায় স্থানান্তর করুন।
বীজতলা পরিচর্চা : ফুলকপি চাষের জন্য ৩০ দিন বয়সের চারা লাগাতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ১২ ইঞ্চি এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১৮ ইঞ্চি হবে। চারা রোপণের সময় সতর্ক থাকুন, যেন শিকড় মুচড়ে বা বেঁকে না যায়। এতে চারার মাটিতে প্রতিষ্ঠা পেতে দেরি হয় ও বাড়ন কমে। রোপণের প্রথম কয়েক দিন প্রখর রোদে যাতে চারা ঝিমিয়ে না যায় তার জন্য কাগজ বা কলার খোল দিয়ে ছায়া দিন।
চারা রোপণঃ ফুলকপি চাষের জন্য ৩০ দিন বয়সের চারা লাগাতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৪ ইঞ্চি এবং সারিতে গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ১৮ ইঞ্চি হবে। চারা রোপণের সময় সতর্ক থাকুন, যেন শিকড় মুচড়ে বা বেঁকে না যায়। এতে চারার মাটিতে প্রতিষ্ঠা পেতে দেরি হয় ও বাড়ন কমে। রোপণের প্রথম কয়েক দিন প্রখর রোদে যাতে চারা ঝিমিয়ে না যায় তার জন্য কাগজ বা কলার খোল দিয়ে ছায়া দিন।
ফসলের সার সুপারিশ : সারের নাম শতক প্রতিসার
কম্পোস্ট ৫০- ৬০ কেজি
ইউরিয়া ১-১.২ কেজি
টিএসপি ০.৬-০.৮ কেজি
পটাশ ০.৮-১ কেজি
জিপসাম ৪০০ গ্রাম
দস্তা ৪০ গ্রাম
অর্ধেক গোবর, সমুদয় টিএসপি ও অর্ধেক গ্রাম পটাশ সার জমি তৈরির সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে। অবশিষ্ট গোবর চারা রোপণের ৭ দিন পূর্বে মাদায় দিয়ে মিশিয়ে রাখতে হবে। চারা রোপণের ২০ দিন পর ১ম বার, ৪০ দিন পর ২য় বার ১৬০ কেজি ইউরিয়া ও ১০০ কেজি এমওপি সার দিন।১০কেজি ডিএপি সার ব্যবহার করলে সমপরিমাণ টিএসপি এবং ৪ কেজি ইউরিয়ার ফল পাবেন, তাই সে পরিমাণ ইউরিয়া কম দিন। খেয়াল রাখুন; সকালে শিশির ভেজা পাতায় যেন দানা সার না পড়ে। জমির উর্বরতা, মাটির ধরণ, বা মাটি পরীক্ষা ভেদে সারের মাত্রা কম বেশি করুন।প্রথমে বোরন সার না দিলে পরবর্তীতে ১ম ও ২য় দফায় ইউরিয়া ও এমওপি সার দেয়ার সময় প্রতি ১০ লিটার পানিতে ১০-১৫ গ্রাম বোরিক পাউডার গুলে পাতায় স্প্রে করে দিন।
সেচ ব্যবস্থাপনা :
১। রোপনের পর প্রথম ৪-৫ দিন একদিন পরপরই সেচ দিতে হবে। পরবর্তীতে ৮-১০ দিন অন্তর বা প্রয়োজন অনুযায়ী সেচ দিলেই চলবে।
২। সেচ পরবর্তী জমিতে “জো” আসলে ফুলকপির স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য মাটি চটা ভেঙ্গে দিতে হবে এবং জমির আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।
৩। সারের উপরি প্রয়োগ যথা সময়ে করতে হবে। উল্লেখ্য সারের উপরি প্রয়োগের পর অবশ্যই সেচ দিতে হবে।
৪। পানি সেচ ও নিষ্কাশনের জন্য বেড সর্বদা পরিষ্কার রাখতে হবে।
সেচ ও নিকাশ পদ্ধতি : ফুলকপি গাছের সারির মাঝে সার দেয়ার পর সারির মাঝখানের মাটি তুলে দুপাশ থেকে গাছের গোড়ায় টেনে দিন। এতে সেচ ও নিকাশের সুবিধা হয়। খেয়াল রাখুন জমিতে যেন পানি বেশি সময় ধরে জমে না থাকে।